SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - শিশুর বর্ধন ও বিকাশ | NCTB BOOK

রামিনের বয়স দুই বছর। সে তার খেলনা গাড়ি নিয়ে খেলে। কিন্তু কয়েক মাস আগে সে যেভাবে খেলত, এখন তার খেলা আরও বেশি বাস্তবধর্মী। সে এখন গাড়ি চালানোর সময় শব্দ করে বু বু ... ... গাড়িটি যখন ধাক্কা খায় কিংবা পড়ে যায় তখন সে অন্য রকম শব্দ করে। অর্থাৎ গাড়ি সম্পর্কে সে নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে খেলছে। পূর্বে রামিন বাবা, দা-দা এভাবে শুধুমাত্র আওয়াজ করত, এখন সে কয়েকটি শব্দ ব্যবহার করে কথা বলে, শুধু তা নয়, রামিন এখন হাঁটতে পারে, দৌড়াতে পারে, কোনো কিছু বেয়ে উঠতে পারে যা কয়েক মাস আগেও তার পক্ষে করা সম্ভব ছিল না। রামিনের মতো বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রতিটি শিশু ধীরে ধীরে কিছু ক্ষমতা অর্জন করে, যা তার আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। এসবই শিশুর বিকাশ। বিকাশ হলো গুণগত পরিবর্তন, যা ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে। জীবনের শুরু থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিকাশ কখনো থেমে থাকে না

আমরা বিকাশ (Development) কথাটির পাশাপাশি বর্ধন (Growth) কথাটি ব্যবহার করি। বর্ধন হলো পরিমাণগত পরিবর্তন। যখন দেহের কোনো একটি অংশের বা সমগ্র দেহের বৃদ্ধি ঘটে যার ফলে আকার আকৃতির পরিবর্তন হয় সেটাই বর্ধন। শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধি, ওজনের বৃদ্ধি এর সহজ উদাহরণ। বর্ধন বিকাশ-এর অর্থ এক নয়। শিশু যখন জন্ম গ্রহণ করে তখন তার ওজন থাকে প্রায় কেজি। ছয় মাসে তার ওজন দ্বিগুণ হয়, এক বছরে হয় তিনগুণ। শিশুর ওজন বৃদ্ধি হলো পরিমাণগত পরিবর্তন বা বর্ধন নবজাতকের ওজন বাড়ার সাথে সাথে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিছু ক্ষমতা অর্জন করে। জন্মের পর প্রথমে শিশু নিজের হাত-পা নিয়ে খেলে, পাঁচ বছরে সেই হাত দিয়ে সে ছবি আঁকে, দশ বছরে দক্ষতার সাথে হাত দিয়ে ক্রিকেট খেলার বল ছুড়তে পারে। শিশুর হাত শুধু দৈর্ঘ্যেই বাড়ে নি, তার গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনই হলো বিকাশ। বর্ধনের তুলনায় বিকাশ অনেক ব্যাপক। বর্ধন হচ্ছে বিকাশের অন্তর্ভুক্ত একটি বিষয়।

বিকাশ একটি জটিল প্রক্রিয়া। পরিপক্বতা অভিজ্ঞতার ফলে বিকাশজনিত পরিবর্তন হতে থাকে। বিকাশে বৃদ্ধি ক্ষয় দু'টোই ক্রিয়াশীল থাকে। জীবনের শুরুতে ক্ষয়ের চেয়ে বৃদ্ধি এবং জীবনের শেষ দিকে বৃদ্ধির চেয়ে ক্ষয় বেশি হতে থাকে। বৃদ্ধ বয়সে শারীরিক, মানসিক দক্ষতার ক্ষয় হলেও চুল নখের বৃদ্ধি হতেই থাকে।

 

বর্ধন বিকাশের বৈশিষ্ট্য :

 

  • বর্ধন বলতে দৈহিক আকার-আয়তনের পরিবর্তনকে বোঝায়। বিকাশ বলতে বোঝায়দৈহিক আকার-আয়তনসহ পরিবর্তন এবং আচরণ, দক্ষতা কার্যক্ষমতার পরিবর্তন।
  • বর্ধন হলো পরিমাণগত পরিবর্তন। অপর দিকে বিকাশ হলো গুণগত পরিবর্তন। তবে পরিমাণগত পরিবর্তনের সাথে এটি সম্পর্কযুক্ত। পরিমাণগত পরিবর্তনের ফলে যে কার্যকারিতা পাওয়া যায় তাই বিকাশ
  • নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মানবজীবন বর্ধনশীল সাধারণত ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত মানবদেহে বর্ধন চলে। অপরদিকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিকাশ চলমান। এর কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। বিকাশের গতি জীবনের শুরুতে ঊর্ধ্বমুখী, মধ্য বয়সে মন্থর এবং বৃদ্ধ বয়সে নিম্নমুখী। যেমন- কৈশোরে বোঝার ক্ষমতা, যুক্তিপূর্ণ চিন্তার ক্ষমতা বাড়ে।
  • কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে চিন্তাশক্তি, স্মরণশক্তি কমতে থাকে। শোনা, দেখা বোঝার ক্ষমতা হ্রাস পায়। অর্থাৎ বৃদ্ধি এবং ক্ষয় দুটোই বিকাশের অন্তর্ভুক্ত বিষয়।

 

বিকাশের ক্ষেত্রগুলো হলো-

 

শারীরিক বিকাশ- বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আকার আকৃতির পরিবর্তন, ওজনের বৃদ্ধি, উচ্চতার বৃদ্ধি, বুক কাঁধ চওড়া হওয়া ইত্যাদি।

 

 বুদ্ধিবৃত্তীয় বিকাশ- কোনো কিছুর প্রতি মনোযোগ দেওরা, বুঝতে চেষ্টা করা, মনে রাখা, যুক্তি দিয়ে চিন্তাকরা, সৃজনী শক্তি, সমস্যার সমাধান করতে পারা ইত্যাদি।

 

সঞ্চালনমূলক বিকাশ- জন্মের পর হাত-পা নাড়াতে পারা, বসতে পারা, হাঁটতে, দৌড়াতে, ধরতে পারা, লাথি মারা, ভারসাম্য রাখতে পারা ইত্যাদি।

 

ভাষার বিকাশ- একটি দুইটি শব্দ বলা, ছোট ছোট বাক্য কাতে পারা। প্রশ্ন করা, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, গুছিয়ে কথা বলতে পারা ইত্যাদি

 

আবেগীর বিকাশ- খুশি হলে হাসা, ব্যথা পেলে কাঁদা, বিকট শব্দে ভয় পাওয়া, কিছু চেয়ে না গেলে রেগে যাওয়া ইত্যাদি শিশুর আবেগের প্রকাশ। এভাবে ভালো লাগা, খারাপ লাগা, আবো সঠিকভাবে প্রকাশ করা এবং প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অর্জন সব গুলোই আবেগীয় বিকাশ।

 

আবেদীর বিকাশ - খুশি হলে হাসা, ব্যথা পেলে কাঁদা, বিকট শব্দে ভয় পাওয়া, কিছু চেয়ে না গেলে রেগে যাওয়া ইত্যাদি শিশুর আবেগের প্রকাশ। এভাবে ভালো লাগা, খারাপ লাগা, আবো সঠিকভাবে প্রকাশ করা এবং প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অর্জন এ সব গুলোই আবেগীয় বিকাশ।

 

সামাজিক বিকাশ- জন্মের পর থেকে বয়স অনুযায়ী মা-বাবা, ভাইবোনসহ অন্যদের সাথে মিলতে পারার ক্ষমতা এবং ধীরে ধীরে পরিবার ও সমাজের রীতিনীতি নিয়ম অনুযায়ী খাপ খাইয়ে চলতে পারার ক্ষমতার বিকাশ। যেমন অন্যকে সাহায্য করা, দয়া প্রদর্শন, সৌজন্যবোধ, সহমর্মিতা, বন্ধুত্ব ইত্যাদি।

 

নৈতিক বিকাশ সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতির উপর ভিত্তি করে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় বোধ গড়ে উঠা, অন্যায়ের জন্য অনুশোচনা করা, ন্যায় কাজের জন্য তৃপ্তি পাওয়াই নৈতিক বিকাশ। মিথ্যা বলা, প্রতারণা করা, অন্যের ক্ষতি করা ইত্যাদি নৈতিকতাবিরোধী কাজ।

 

শিশুর বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিকাশ একে অন্যের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। শিশু যখন বসতে শেখে, হামাগুড়ি দিয়ে চলতে শেখে, হাঁটতে শেখে, তখন সে তার চারপাশের জগতের সাথে পরিচিত হয়। এতে তার বুদ্ধিবৃত্তীয় বিকাশ ঘটে। আবার শিশুটি যখন নতুন কিছু শেখে তখন বড় সদস্যরা তাকে নানাভাবে উৎসাহিত করে, আনন্দ দেয়। এ কাজগুলোর মধ্য দিয়ে শিশুর সামাজিক ও আবেগীয় বিকাশ ঘটে। সুতরাং বলা যায় সকল প্রকার বিকাশের সমন্বয়ে মানব শিশুর পূর্ণবিকাশ ঘটে।

 

কাজ - বর্ধন ও বিকাশের পার্থক্য চার্চ করে দেখাও।

 

Content added || updated By